ওয়েব ডেস্ক: দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সরকারের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। একটি করোনা সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে আসা, অন্যটি সবাইকে করোনার টিকার আওতায় নিয়ে আসে। তবে দ্বিতীয়টিতেই জোর দিচ্ছে সরকার। সেজন্য শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমে গতি আনতে সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
অন্যদিকে স্কুলগামী যাদের বয়স ১৮ এর নিচে তাদেরকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে ১৬ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কত শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছেন তার তথ্য চেয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সংক্রান্ত বিগত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার নির্দেশনা পাঠিয়েছে ইউজিসি। ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠাতে হবে। এতে যেসব তথ্য চাওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কতজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকা নিতে নাম নিবন্ধন করেছেন; কতজন প্রথম ডোজ নিয়েছেন কিন্তু দ্বিতীয় ডোজের তারিখ পাননি; কতজন টিকা নেননি, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই। পাশাপাশি এতে বিদেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তার নাম-পদবিসহ জানাতে বলা হয়।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে করোনার বর্তমান পরিস্থিতিসহ সার্বিক পরিস্থিতির প্রতিবেদন চাওয়া হয় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের গঠিত জাতীয় পরামর্শ কারিগরি পরামর্শক কমিটির কাছে। বুধবার এ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে পারেনি কমিটি। তবে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) তা জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
সে কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পূর্বঘোষিত বৈঠকটি হয়নি। এটি ৫ সেপ্টেম্বর ডাকা হয়েছে। অন্যদিকে ১৫ অক্টোবরের পর সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিতে ৪৩ পাবলিক ও ৯৬ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। এতে টিকা দেওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। সব প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সার্বিক সিদ্ধান্তে আসবে সরকার।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বুধবার পরামর্শক কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা সেটি দিতে পারেনি। আজ তারা এ প্রতিবেদন জমা দেবে। কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করতে ৫ সেপ্টেম্বর বৈঠকে বসবে আন্তঃমন্ত্রণালয়। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, আগের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সংশ্লিষ্টদের অন্তত প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার পর ১৫ দিন পার হলে ক্যাম্পাস খোলা যাবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রচলিত পন্থা অবলম্বন করবে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসি সমন্বয় করবে।
২৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে সরকারের নীতিনির্ধারকরা। সেখানে ১৫ অক্টোবরের পর বা ১৭ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে। টিকা দেওয়া না হলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে না।
ইউজিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য দুটি দিকের উন্নতি দরকার। একটি হচ্ছে করোনার সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে আসা, আরেকটি টিকা সম্পন্ন হওয়া। সংক্রমণের দিকটি প্রাকৃতিক বিষয়। তাই আমরা চাইছি সবাইকে টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোই সিদ্ধান্ত নেবে। যাদের টিকা দেওয়া শেষ তারা নিজেদের দায়িত্বে ক্যাম্পাস খুলে দেবে। কত শতাংশ শিক্ষার্থীকে তারা ক্যাম্পাসে ও হলে অনুমোদন করবে সেটাও তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে আলোচনা হয়েছে, সিনিয়রদের এনে অবস্থা বুঝে পরে বাকিদের নিয়ে আসার ব্যাপারে। টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করার পর প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১৫ দিন অপেক্ষার ব্যাপারেও এর আগে আলোচনা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শিগগিরই
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা প্রয়োগের বিষয়ে ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম।
বুধবার তিনি বলেন, স্কুলের বাচ্চাদের করোনা টিকা দেওয়ার বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে। বৃহস্পতিবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি বৈঠক আছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে স্কুলের শিশুদের করোনা টিকা দেওয়া হবে কি না।